বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
বানারীপাড়া প্রতিনিধি॥ করোনাভাইরাসের কারণে বরিশালের বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ভানান গ্রামের আকাশের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। ঢাকার সাভারে শ্রাবণী নিট ওয়্যার গার্মেন্টে চাকরি নিয়ে মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে ধাপে ধাপে অপারেটর পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন আকাশ। ভালোই চলছিলো তাঁর কর্মজীবন। নিজে স্বাচ্ছন্দে চলার পরেও গ্রামের বাড়িতে বাসাসহ সতমায়ের পরিবারের খরচ সামলাতেন তিনি।
করোনাভাইরাস তাঁর চাকরিটি কেড়ে নিয়ে দুই চোখে অমানিশার ঘোর অন্ধকার নামিয়ে দিয়েছে। গত ২৯ মার্চ সকালে গার্মেন্ট ডিউটি করতে যাওয়ার পরে তাঁর কাছ থেকে হাজিরার কার্ডটি কেড়ে নিয়ে একমাসের বেতন ধরিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় তাকেসহ আরও ৫ শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রঘাতের মতো। চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে আকাশ। বিভিন্ন গার্মেন্ট চাকরির জন্য ধর্ণা দিয়েও ব্যর্থ হয়। নিরুপায় হয়ে আবার ফিরে আসেন সতমায়ের সংসারে। দিন মজুর বাবা মহিউদ্দিন ফকিরের সংসারেও নিত্য অভাব-অনটন। করোনায় তিনিও বেকার। অবশেষে বানারীপাড়া পৌর শহরে ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা নিয়ে নামতে বাধ্য হয় আকাশ।
গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি পৌর শহরে রিকশা চালাচ্ছে। এখনও ঠিকমতো রিকশা চালানো আয়ত্ত করতে পারেনি আকাশ। পথঘাটও তাঁর অচেনা। সারাদিন রিকশা চালিয়ে মালিককে ভাড়ার ২০০ টাকা দেওয়ার পরে দিনশেষে তাঁর ১৫০-২০০ টাকা থাকে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে সন্ধ্যায় বাজার সওদা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। নিরুপায় হয়ে রিকশা চালালেও এ পেশায় স্থায়ী হতে চায় না আকাশ। তাঁর বিশ্বাস করোনার এই ঘোর অমানিশা কেটে একদিন নতুন সূর্যোদয় হবে। তিনি ফিরে যাবেন প্রিয় রাজধানীতে, ফিরে পাবেন চাকরি।
একই স্বপ্নের জাল বুনছেন গার্মেন্টের চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়ে কখনও রিকশা আবার কখনও রাজমিস্ত্রীর সহকারীর কাজ করা বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ভানান গ্রামের শাহাদাৎ, শাওন, শাহিন, পৌর শহরের রায়েরহাটের তাওহিদ ও ভানান গ্রামের বেকার কুলসুমরা।
Leave a Reply